মেয়েটির নাম জয়িতা। উজ্জ্বল গৌর বর্ণ তার গায়ের রং, মেঘহীন একহারা গড়ন। কোমর পর্যন্ত লম্বা চুলের মেয়েটির মন ভাল নেই। কারণ সে আয়না দেখতে ভয় পায়। এমনকি চৌবাচ্চার পানিতেও দেখে ভূত। মেয়েটি আর দেখতে চায় না তার বীভৎস মুখাবয়ব। দুর্বৃত্তরা এসিডে ঝলসে দিয়েছে মেয়েটির সুন্দর মুখ, হাত ও বুক। কারণ টা সেই চিরাচরিত। প্রেম প্রত্যাখ্যান। প্রেমিকের আস্ফালন। অবশেষে কাপুরুষের শেষ অস্ত্র। এসিড সন্ত্রাস। মেয়েটির ভাললাগার মানুষটিও আজ কাছে নেই। কি এক অদৃশ্য অজুহাতে বারবার "দুঃখিত এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না, একটু পরে আবার চেষ্টা করুন" বলে তার গ্রামীণ ফোনের সংযোগ। কি ঘটেছে? অনুমানসিদ্ধ নিশ্চিত এক ব্যাপার। এতদিনের উদাত্ত বানী "চেহারা কোন বিষয় নয়, মনুষের মনটাই হলো আসল" হয়ে গেছে নিষ্ফল এক উপহাস।
বরাবরই ভালো ছাত্রী হিসাবে সুনাম ছিল মেয়েটির। সাময়িক বিরতি। আবারো মেধার স্বাক্ষর রাখে সে এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে। মেয়েটির আনন্দ দেখে কে। কিন্তু বাবা মার চোখে হতাশা। কেননা বিয়ের বাজার বলে ভিন্ন কথা । এতো ভালো রেজাল্ট তো বিয়ের বাজারে নিস্প্রয়োজন। সুন্দর মুখের তো রমরমা বাজার। নিমিষেই বিকোয় সুন্দরী মুখ আর চাকরীজীবি পুরুষ। মেয়েটির স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। তার মতো অসহায় গরীব মেয়েদের কল্যানে আত্নোৎসর্গ করা। আত্নবিশ্বাসে বলীয়ান মেয়েটি স্বপ্ন দেখে এক সবুজ পৃথিবীর।
প্রায়ই স্টাডিরুমে দেখা হয় ছেলেটির সঙ্গে। দুর থেকে চোখাচোখি হয়। এখন পর্যন্ত এই সার। বেশি আগ্রহ দেখায়নি মেয়েটি। ছেলেটিও এতটা সাহসী হতে পারেনি মেয়েটি বোরখা পড়ে বলে। ছেলেটির এমবিবিএস কোর্সের থার্ড ইয়ার পরীক্ষা খুব নিকটে। তাই স্টাডি রুমে বেশি বেশি সময় কাটানোটা জরুরি। তার থেকেও জরুরি সেক্ডে ইয়ারের এই মিষ্টি মেয়েটির চোখে চোখে রাখা। রক্ষনশীল মনোভাবের ছেলেটি স্বপ্ন বুনতে খুব ভালাবাসে। আর কল্পনায়ও বাসর সাজায় মেয়েটিকে নিয়ে। মেয়েটিও ভাবে, আনমনে আসুক না কেউ নতুন করে। কিইবা ক্ষতি যদি ভালবেসে দুহাত ধরে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন্। একটু বোঝার চেষ্টা করে মেয়েটি। আর একটু সাবধান হয় সে।
ছেলেটি বেপরোয়া। মেয়েটির কোন অজুহাতই শুনতে চায় না সে। অবশেষে কফির নিমন্ত্রনে রাজি হয় মেয়েটি। মেয়েটি জানে কি ঘটবে অবশেষে। মনে মনে প্রমাদ গোনে সে। আর নিজের নিবর্ুদ্ধিতার জন্য নিজেকেই অভিসম্পাত করতে থাকে। তবুও মেয়েটি অপেক্ষা করে কফি হাউসের গেটে, বকুল তলায় কিংবা দোয়েল চত্বরে। আর উৎকন্ঠায় নাকের ঘাম মোছে বারবার। ছেলেটিও মহাফাপরে। কি যে এক বোকামী ঘটতে যাচ্ছে ভেবে। সুন্দরী নীল নয়নার কাহিনী শুনেছে সে এক বন্ধুর কাছে। হতবাক হয়েছে সে, স্বপ্ন ও ভেঙ্গেছে তার। আজম্ন সংস্কার মাথাচাড়া দিয়েছে তার মনে। এতদিনের শিক্ষা ও সভ্যতাও মেয়েটির কুৎসিত চেহারাকে আড়াল করতে পারল না। আশু কর্তব্য পালনের জন্য কিংবা নিতান্তই সৌজন্যেও খাতিরে মুখোমুখী হল তারা দুজন।
মেয়েটি লক্ষ্য করে ছেলেটিকে। আগের সেই উচ্ছ্বাস যেন আর নেই। কেমন নিস্প্রভ, নির্জিব ছেলেটা। অথচ মেয়েটি জানে ছেলেটি আদৌ এরকম নয়। পরিস্থিাতিটা বোঝার চেষ্টা করে সে। পিনপতন নিরবতা ভেঙ্গে অবশেষে ছেলেটিই শুরু করে। " আসলে আমি একটু কনজারভেটিভ মাইন্ডের। আমার ফ্যামিলিও যথেষ্ট করজারভেটিভ । সে হিসাবে আমি বন্ধু নির্বাাচনের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটাকে প্রায়োরিটি দেই। ঠিক যেমন তুমি । আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। ছেলেটি একটু থামে। তার চোখে মুখে স্পষ্ট জিজ্ঞাসা। মেয়েটি নির্বাক বসে থাকে। কফির কাপ উপভোগ কওে মেয়েটির অলস, নিস্প্রান চুমু। ছেলেটা এখনও উৎসুক। প্রানপন চেষ্টা তার। মেয়েটি এতক্ষনে সামলে নেয় নিজেকে। ছেলেটির আচারনের পার্থক্য আড়াল হয় না তার কাছে। কষ্টের এক শীতল স্রোত বয়ে যায় তার সারা শরীরে। তবুও সৌজন্যের খাতিরে কিংবা নাটকের এ অংকের পরিসমাপ্তি ঘটাতে মেয়েটিও বন্ধুত্বের জয়গান করে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মামুন ম. আজিজ
অবশ্যই ভালো গল্প এটা। কিন্তু কবি হিসেবে আসায় আর আমি প্রথমে গল্পগুলো সব পড়তে থাকায় এটা মিস হয়ে গিয়েছিল। .....এসিড ঝলসানো নারীর কষ্ট কেউ ফুটিয়ে তোলেনি। সে কানে হ্যাটস অফ ফর ইউ বাডি।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।